আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
ফিলিস্তিনের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল হামাস ও ফাতাহ দশকের পর দশক ধরে চলমান বিরোধের অবসান ঘটিয়ে ঐক্য স্থাপনে সম্মত হয়েছে। গত সপ্তাহের শুরুর দিকে চীনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তারা এ ঘোষণা দেন।
বেইজিং ঘোষণায় স্বাক্ষর করে এই দুটি দল ঐতিহাসিক রাজনৈতিক বিভাজন দূর করে ফিলিস্তিনের জাতীয় ঐক্য শক্তিশালী করতে সম্মত হয়েছে। চীনের নেতৃত্বে এই পুনর্মিলন প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই শীর্ষ সম্মেলনে আরও ১২টি ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী অংশগ্রহণ করে।
চীনের ভূমিকা
বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনকে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দেখছেন। গত মার্চে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সমঝোতা করানোর পর এবার ফিলিস্তিনের হামাস ও ফাতাহর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চীন নিজের উদীয়মান মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকাকে আরও মজবুত করছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক গবেষক দিরেন ডোগান বলেন, মধ্যপ্রাচ্য হলো চীনের প্রস্তাবিত নতুন বিশ্ব কাঠামোর একটি ক্ষুদ্র প্রতিচ্ছবি।
চীনের মধ্যপ্রাচ্যে প্রবেশ ও আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে নতুন অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা ২০২২ সালের শেষের দিকে শুরু হয়েছিল। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের কারণে তা বাধাগ্রস্ত হয়।
মানবিক ও কৌশলগত উদ্যোগ
ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক দেগাং সান বলেন, চীনের ফিলিস্তিন ইস্যুতে জড়িত হওয়ার পেছনে মানবিক উদ্বেগের পাশাপাশি বাস্তব দিকও রয়েছে।
তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার এবং মধ্যপ্রাচ্যের তেলের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক চীন অঞ্চলটিতে অংশীদারিত্ব চায়।
বিগত শতাব্দীতে কেবল অর্থনৈতিক সুবিধা চাইলেও বর্তমানে চীন তার কঠিন অর্থনৈতিক শক্তির পাশাপাশি কূটনৈতিক শক্তি প্রসারিত করতে প্রস্তুত।
চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। ফলে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সমাধান খুঁজে পাওয়া চীনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
দীর্ঘদিনের বিরোধ
ফিলিস্তিনে ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ফাতাহ ও হামাসের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধে একাধিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও পুনর্মিলন কঠিন হয়েছে।
প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)-এর প্রধান দল ফাতাহ। ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির পর থেকে পশ্চিম তীরের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে তারা। আর হামাস ২০০৭ সাল থেকে গাজা নিয়ন্ত্রণ করছে।
বেইজিং বৈঠক অনেকের মতে যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য এবং নিরপেক্ষ প্রচেষ্টার একটি উদাহরণ। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড ফাল্ক বলেন, চীনের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি সমর্থনের মনোভাবকে তুলে ধরছে।
মার্কিন প্রভাব হ্রাস, চীনের উত্থান
নতুন ঘোষণায় বলা হয়েছে, আসন্ন মেয়াদে রামাল্লায় অস্থায়ী ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব কাঠামো স্থাপন করা হবে। এটি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন আলোচনা প্রক্রিয়াকে মূলত মার্কিন নিয়ন্ত্রণ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাবে।
অনেকের মতে, মার্কিন প্রশাসন ইসরায়েলকে সমর্থনের কারণে বিশ্বস্ততা হারিয়েছে। কিন্তু কেউ কেউ মনে করেন, ১৯৯০-এর দশকে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রভাবের পতনের শুরু।
চীন এই পতনকে কাজে লাগিয়ে প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছে। ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর অভ্যন্তরীণ বিভাজন ঘুচিয়ে ঐক্য স্থাপন করতে পারলে ফিলিস্তিন নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে পারবে।
ডোগান বলেন, যদি ফিলিস্তিন নিজের ঐক্য ও অখণ্ডতা প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং অভ্যন্তরীণ বিভাজন ঘুচিয়ে নিতে পারে, তবে তারা নিজেরাই দাঁড়াতে পারবে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সমর্থন চালিয়ে গেলেও।