নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
চেন্নাই বিমান বন্দরে বাংলাদেশ থেকে আসা বিমান অবতরণ করতেই অভিবাসন কর্মকর্তাদের ছুটোছুটি শুরু হয়। ভারতে কেন আসা, পাসপোর্ট নিয়ে বড় কর্তাদের কাছে দৌড়াদৌড়ি, এই কাগজ সেই কাগজ সবমিলিয়ে ভারতে পা দিয়ে এক প্রকার জেরার মুখে পড়তে হয় বাংলাদেশ থেকে আসা লোকজনকে।
অভিবাসন কর্তাদের একটি সাধারণ প্রশ্ন হলো, ‘বাংলাদেশের অবস্থা কেমন এখন? ভালো নাকি খারাপ।’ বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ভারত-বাংলাদেশ সিরিজ কাভার করতে আসা এই প্রতিবেদকসহ জনা কয়েক সাংবাদিককেও এক কর্তা প্রশ্ন করে জানতে চাইলেন, ‘সংখ্যালঘুদের উপর এত হামলা কেন হচ্ছে?’
অথচ বুধবার রাত পোহালে চেন্নাইয়ের এম-এ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে শুরু হবে বাংলাদেশ-ভারত দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটি। ক্রিকেট পাগল ভারতীয়দের এটি জানার কথাই কম-বেশি। কদিন হলো রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিরা চেন্নাইয়ে অনুশীলন করছেন। কিন্তু অভিবাসন কর্তার প্রশ্নে অবাক হওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।
তোমরা কি হকি খেলা কাভারের জন্য আসছ?’ পাসপোর্ট চেক করতে করতে আরেক কর্তা বললেন, ‘কবে শুরু হবে খেলা?’
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। ভ্রমণ ভিসা প্রদান একপ্রকার বন্ধ। জরুরি চিকিৎসাসেবাসহ অতিপ্রয়োজনীয় কিছু ভিসা দেওয়া হচ্ছে। যারা জরুরি প্রয়োজনে আসছেন তারাও নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বের হতে পারছেন। বের হওয়ার পর আরেক দৃশ্য।
বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে আসা যাত্রীদের দেখেই হাঁক দিচ্ছেন ট্যাক্সি ড্রাইভাররা। আগের মতো যাত্রী নেই। তাদের মাঝে হাহাকার। এই সুযোগে ভাড়া নিয়ে বাংলাদেশিরা কাটাছেড়া করতে পারছেন বেশ। অভিবাসন কর্তাদের মতো ট্যাক্সি ড্রাইভারদের প্রশ্ন, বাংলাদেশের অবস্থা কবে ঠিক হবে? এখন কেমন যাচ্ছে? কেন এমন হচ্চে? বাংলাদেশি যাত্রীদের না পেয়ে তাদের মধ্যে একটা মন্দাভাব বিরাজ করছে। ক্রিকেটের চেয়ে তাদেরও ভাবনায় এখন শুধু বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে।
অবশ্য তাদের মাঝে হাহাকার বিরাজ করার কথা। একটি পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে সেটি হবে আরও স্পষ্ট। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারত শুধু মেডিকেল ভিসা দিয়েছে ৩ লাখ ৪ হাজার ৬৭টি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যেটি প্রথম ৭ মাসে বেড়েছিল ৪৭ শতাংশ। কিন্তু শেখ হাসিনার পতনের পর সেটি অনেক কমেছে।
তাইতো অভিবাসন কর্তা হতে শুরু করে ট্যাক্সি ড্রাইভার, সবার মুখে একটাই প্রশ্ন, ‘বাংলাদেশের অবস্থা স্বাভাবিক হবে কবে?।’ ‘উন্নতি হচ্ছে দিনে দিন’- উত্তরে এমন বলা হলেও তারা খুব আস্থা রাখছেন না এই কথায়। তারা তখনি আশ্বস্ত হবেন, যখন বাংলাদেশ থেকে আগের মতো যাত্রী আসা শুরু হবে। কবে হবে তা বলে দেবে সময়!
দুই দেশের সম্পর্ক যেমনই হোক ‘শো মাস্ট গো অন’ প্রবাদটিকে সত্য করে আপাতত চেন্নাইয়ে সামনের পাঁচদিন ক্রিকেট চলবে। পাকিস্তানকে হারানোর পর নাজমুল হোসেন শান্তর দলের আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে। একমাত্র শান্তরাই পারবেন ভারতীয়দের ভাবনা ভিন্ন দিকে ঘোরাতে!