আরজি করকাণ্ডে শহরের পরিস্থিতি অস্থির। লাগাতার নাগরিক প্রতিবাদের পাশাপাশি পুজো বয়কট করার ডাক দিয়েছেন কেউ কেউ। পাশাপাশি টালিউডে যৌন হেনস্তার অভিযোগে তোলপাড়। এর মধ্যেই আসন্ন পুজোয় মুক্তি পাচ্ছে টালিউড অভিনীত রুক্মিণী মৈত্রের ছবি ‘টেক্কা। পুজো নিয়ে কী ভাবছেন এ অভিনেত্রী?
সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় এবং দেব এন্টারটেইনমেন্ট ভেঞ্চার্স লিমিটেডের প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে ‘টেক্কা’। এ সিনেমায় অভিনয় করেছেন রুক্মিণী মৈত্র। ছবিটি পুজোয় মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নির্মাতা। আগামী ৮ অক্টোবর মুক্তি পাচ্ছে সিনেমাটি। এতে রুক্মিণী পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। আছেন দীপক অধিকারী দেব, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, অনির্বাণ চক্রবর্তী প্রমুখ।
সাম্প্রতিক নারীনিগ্রহের ঘটনাগুলো রুক্মিণীর অজানা নয়। নারীসুরক্ষার জন্য ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই বার্তা দিতে চেয়েছেন এ অভিনেত্রী।
সম্প্রতি বিদেশে ছুটি কাটিয়ে শহরে ফিরেছেন রুক্মিণী মৈত্র। তার পরেই শুরু হয়ে গেছে তার নতুন ছবি ‘টেক্কা’র প্রচার। এ অভিনেত্রী বলেন, এখনো কিছুই ভেবে উঠতে পারিনি। শহরে ফিরেই পরিবারে কিছু সমস্যা হয়। এখন তো ছবির প্রচারে ব্যস্ত হয়ে যাব। আরজি কর আবহে সাধারণ মানুষের একাংশ উৎসবের বিপক্ষে। রুক্মিণীর মতে, কেউ কোনো বিষয়কে সমর্থন করবেন, না কি তার বিরোধিতা করবেন— সেটি ব্যক্তির নিজস্ব সিদ্ধান্ত। অভিনেত্রী বলেন, কেউ চাইলে উৎসবে অংশ না নিতেই পারেন, সেটি তার সিদ্ধান্ত। তার জন্য কেউ তাকে অসম্মান করবে না।
তিনি বলেন, উৎসব খুবই সীমিতসংখ্যক মানুষের কাছে ‘উৎসব’ হয়ে ওঠে। রুক্মিণী বলেন, সমাজের খুব ছোট্ট একটা অংশ অর্থনৈতিক দিক থেকে সুরক্ষিত। তারা আগামী এক বছর কিছু না করলেও হয়তো কোনো সমস্যা হবে না।
কিন্তু অভিনেত্রীর আশঙ্কা ক্ষুদ্র বিক্রেতাদের সেই অংশকে নিয়ে, যারা পুজোর কয়েক দিনের উপার্জনের ওপর নির্ভর করে আগামী কয়েক মাসের পরিকল্পনা করেন। রুক্মিণী বলেন, ‘‘উৎসবে ফিরতে বলছি না। কিন্তু এ মানুষগুলোর দিকে সাহায্যের হাতটা বাড়িয়ে দিই, তা হলে হয়তো মানুষ হিসেবেও আমরা আরও একটা ধাপ এগিয়ে যাব। আরজি করের ঘটনাকে মনে রেখেই রুক্মিণী জানালেন, ভালো-খারাপের মিশেলেই সমাজ। কিন্তু কোনো একটি খারাপ ঘটনাকে ভালো করতে গিয়ে আরও একাধিক খারাপ পদক্ষেপের বিরোধী তিনি।
টালিউডে একের পর এক নারীনিগ্রহের ঘটনা সম্পর্কে অবগত রুক্মিণী। একদিকে ইন্ডাস্ট্রিতে নারীসুরক্ষা বজায় রাখতে টলিপাড়ার নারী শিল্পীরা সংগঠন তৈরি করেছেন। অন্যদিকে হেমা কমিটির আদলে রাজ্যে একটি কমিশন তৈরির জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন অভিনেত্রী ঋতাভরি চক্রবর্তী। রুক্মিণী বলেন, খুবই ভালো উদ্যোগ। সুদীপ্তাদি (অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী) আমাকে সেদিনই বিষয়টি জানিয়েছেন। আর আমার মনে হয়, এ ধরনের সংগঠনে নিরপেক্ষ একটি প্যানেলও থাকা উচিত।
রুক্মিণী বলেন, অনেক দিন আগেই ইন্ডাস্ট্রিতে নারীসুরক্ষার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। তার আক্ষেপ, যেটি ঘটেছে, সেটি সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক! দুঃখের বিষয়— কিছু একটা ঘটে গেলে তখন আমরা নড়েচড়ে বসি। দেরি হলেও সেটি শুরু হয়েছে দেখে আমি খুব খুশি। এ অভিনেত্রী বলেন, ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই তিনি ইন্ডাস্ট্রিতে নারীসুরক্ষার পক্ষে বার্তা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ঘটনা, কিন্তু আমার এখনো মনে আছে। কোনো একটি প্রতিযোগিতায় আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, নিজের জন্য কী করার ইচ্ছা জানতে চাওয়া হয়। অনেকেই ভেবেছিলেন, আমি নায়িকাসুলভ কোনো উত্তর দেব। আমি বলেছিলাম— আমি নারীসুরক্ষার ক্ষেত্রে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে চাই।
দেবের প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রুক্মিণী। শুটিংয়ের সময় নারী শিল্পীদের সুবিধার জন্য তাদের প্রযোজনা সংস্থা যে বাড়তি সুবিধা ফ্লোরে রাখে, সে কথা অনেকেরই জানা। রুক্মিণী বলেন, নারীদের সুরক্ষা বা হাইজিন শুধু নয়, আমরা কোনো প্রজেক্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নারীসুরক্ষার বিষয়টি খেয়াল রাখি। শিল্পীদের সুবিধার্থে তাই প্রযোজনার সঙ্গে নিজেও জড়িয়ে থাকেন রুক্মিণী। তিনি বলেন, পুরুষ ও নারী— প্রত্যেকেই যেন সঠিক সময়ে গাড়ি পান, ভালো খাবার পান— এ রকম কিছু জিনিস ঠিক রাখার চেষ্টা করা হয়। কারণ একজন মানুষকে ভালো এবং সুরক্ষিত পরিবেশ দিলে আমার বিশ্বাস— তিনিও নিজের সেরাটা দিতে পারেন।
নারীসুরক্ষা বজায় রাখতে অবশ্যই পদক্ষেপ করা উচিত বলে মনে করেন রুক্মিণী। তবে ‘চ্যাম্প’ ছবির সময় থেকেই যে তিনি নিজের সংস্থার মাধ্যমে সেই প্রচেষ্টা শুরু করেছেন বলে জানান তিনি। রুক্মিণী বলেন, নিজেদের ঢাক পেটাতে চাই না। কিন্তু আমি একটা ইতিবাচক উদ্যোগ বা একটা ছোট্ট পদক্ষেপ নিলে চারজন সেটা দেখেও আরও ছড়িয়ে দিতে পারে, যা আরও কিছুসংখ্যক মানুষকে হয়তো অনুপ্রাণিত করবে।