সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪০ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
ডিবিসি চ্যানেলের পরিচালক ও তার পরিবারের নামে মিথ্যা সংবাদ প্রচার:থানায় সাধারণ ডায়েরি ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতায় যেসব কাজ করতে পারবে সেনাবাহিনী শেখ হাসিনাকে দোটানায় থাকতে দিল ভারত বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু, পানিবন্দী ৯ লাখ পরিবার ৮ জেলা বন্যাকবলিত, আরও বিস্তৃত হতে পারে শেখ হাসিনার বিচারের বিষয়ে অবস্থান জানাল জাতিসংঘ ঢাকা শহরকে দূষণমুক্ত ও বাসযোগ্য করতে যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে :সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করেছে এনবিআর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের বিদায়ী সাক্ষাৎ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ

৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হারানোর শঙ্কা

Reporter Name / ১৮ Time View
Update : রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অভাবে দেশে বছরে ২৫-৩০ শতাংশ কৃষি এবং খাদ্য পণ্য নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্ট্যাডিজের হিসাবে নষ্ট হওয়া পণ্যের মোট ক্ষতির অংক ৫ হাজার কোটি টাকা। বিগত ৫০ বছরে হিসাবটি যোগ করলে এ ক্ষতির অংক সম্ভাব্য দুই থেকে আড়াই লাখ কোটি টাকা। যা চলতি জিডিপির সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এই বিপুল অংক দেশের মূল অর্থনীতিতে যোগ হয়নি।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতায় আটকে আছে কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের বিকাশ।এরমধ্যে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে গ্যাস ও বিদ্যুৎ মিলছে না। অধিকাংশ স্থানে কাঁচামালের প্রাপ্যতা ও সরবরাহের অনিশ্চয়তা।এ ছাড়া উদ্ভাবন, গবেষণা, মান উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ, পরীক্ষাগার স্থাপন, সংরক্ষণ এবং প্যাকেজিং ব্যবস্থা উন্নয়নে জোরদার নেই। স্থানীয় পর্যায়ে অনেক পণ্য উৎপাদন হলেও প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে অগ্রাধিকার পাচ্ছে না।পণ্য উৎপাদনশীলতা সংক্রান্ত ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনবল এবং উদ্ভাবনী প্রযুক্তি অনুসরণের অভাব রয়েছে।

আরও দেখা গেছে, সংরক্ষণ সুবিধা স্বল্পতা, ব্যবসার তথ্য ও বিপণন প্রবেশাধিকার সীমিত সুবিধা, অধিক পরিচালন ব্যয় এবং ব্যবসাবান্ধব শুল্ক সুবিধার অভাবও রয়েছে। ফলে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভরতার অভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে পণ্যে ভ্যালু অ্যাড (মূল্য সংযোজন) কম হচ্ছে। চাহিদা স্বত্বেও রপ্তানি বাজার বাড়ছে না।

এসব প্রতিবন্ধকতা দূর না করা হলে ২০২৮ সালের মধ্যে এ খাতে ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পারলে ২০২৮ সালের মধ্যে কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের মাধ্যমে অতিরিক্ত সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা জিডিপিতে যোগ করা সম্ভব। বর্তমান জিডিপিতে এ শিল্পের অবদান ৯৬ হাজার কোটি টাকার ঘরে আটকে আছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, পরিবহণ, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ এবং উৎপাদন পর্যায়ে নানাভাবে বছরে আম নষ্ট হচ্ছে ২৫-৩০ শতাংশ, কাঠাল ৪৫ শতাংশ এবং সবজি হচ্ছে ৩০ শতাংশ। রপ্তানির চাহিদা এক লাখ মেট্রিক টনের বেশি হলেও বর্তমানে ৩ হাজার মেট্রিক টনের বেশি আম রপ্তানি সম্ভব হচ্ছে না। সঠিক স্থানে প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে উঠলে এই নষ্ট হওয়া পণ্যের পরিমাণ আরও কম হতো এবং রপ্তানি বাড়ানো যেত।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া অনেক এগিয়ে গেছে। ভারতের কেরালায় আনারস ‘মরিশাস’ জাতটি জিআই প্রডাক্ট হিসেবে রাজ্য সরকার কর্তৃক স্বীকৃত। এ আনারসকে কেন্দ্র করে বহু ক্ষুদ্র প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে উঠেছে। প্রাথমিকভাবে আনারস থেকে প্রায় ১৫ রকমের ভ্যালু অ্যাডেড খাদ্যপণ্য তৈরি হচ্ছে। তার মধ্যে ফ্রেশকাট পাইনঅ্যাপল, ড্রাইড পাইনঅ্যাপল, আনারসের জ্যাম, জেলি, জুস, সফট ক্যান্ডি, আনারসের চাঙ্ক, পাল্প ইত্যাদি উল্লে­খযোগ্য। এছাড়া কেরালার ভার্জিন নারকেল তেল, নারকেল পাউডার ও নারকেলের উপজাত থেকে তৈরি নানা রকমের শোপিস পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে। এসবের অর্থনৈতিক ভ্যালুও অনেক। সেখানে কলা থেকে তৈরি নানা রকম চিপসও দেদারছে বিক্রি হয় রাস্তার ভালোমানের দোকানগুলোয়। একইভাবে ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটিতে ফুটপাথের দোকানে সুন্দর রেপিং করা মোড়কে বিভিন্ন ফলের ফ্রেশকাট বিক্রি করতে দেখা যায়। যা বেশ লোভনীয়।

বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গত ২৮ এপ্রিল নিজ কার্যালয় বসে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ (বর্তমান সাবেক) যুগান্তরকে বলেন, দেশে এখনো পর্যন্ত বড় কোনো প্রক্রিয়াকরণ শিল্প গড়ে উঠেনি। আনারস ও আম প্রচুর উৎপাদন হলেও প্রক্রিয়াজাত করা যাচ্ছে না। তিনি মনে করেন, কৃষি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপনে গবেষণা দরকার। এ জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে।

কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের অবস্থা জানতে গত ৭ জুলাই সরেজমিন পরিদর্শন করা হয় রাজশাহীর বিভিন্ন জায়গা। রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ সূত্রমতে, স্থানীয়ভাবে বছরে টমেটো বেচাকেনা হয় ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা এবং পান ১৫৬১ কোটি টাকা। চলতি মৌসুমে ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমির গাছে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ১৬৫ টন। গত বছর প্রায় একশ কোটি টাকার আম বিক্রি হয়েছে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, এখানে আমসহ কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে উঠলে স্থানীয় কৃষকেরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনি এই অঞ্চলে কর্মসংস্থান বাড়বে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By ThemesDealer.Com