সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:১১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
ডিবিসি চ্যানেলের পরিচালক ও তার পরিবারের নামে মিথ্যা সংবাদ প্রচার:থানায় সাধারণ ডায়েরি ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতায় যেসব কাজ করতে পারবে সেনাবাহিনী শেখ হাসিনাকে দোটানায় থাকতে দিল ভারত বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু, পানিবন্দী ৯ লাখ পরিবার ৮ জেলা বন্যাকবলিত, আরও বিস্তৃত হতে পারে শেখ হাসিনার বিচারের বিষয়ে অবস্থান জানাল জাতিসংঘ ঢাকা শহরকে দূষণমুক্ত ও বাসযোগ্য করতে যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে :সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করেছে এনবিআর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের বিদায়ী সাক্ষাৎ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ

শেখ হাসিনাকে দোটানায় থাকতে দিল ভারত

Reporter Name / ২৬ Time View
Update : সোমবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে চলতি মাসের শুরুতে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। সরকারি দমনপীড়নের জেরে লাশের সংখ্যা বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দ্রুত বোন শেখ রেহানাকে সাথে নিয়ে হেলিকপ্টারে চড়েন শেখ হাসিনা তার সাথে দলের কোন রাজনৈতিক সহযোগী ছিলেন না এবং দলের জ্যেষ্ঠ কোন মন্ত্রীও ছিলেন না। ৫ আগস্ট থেকে তিনি প্রতিবেশী দেশ ভারতেই অবস্থান করছেন। গত ৫ আগস্ট হাসিনার পতন ও দেশত্যাগের সিদ্ধান্তকে বাংলাদেশের আন্দোলনকারীরা উল্লাসের সাথে স্বাগত জানালেও নয়াদিল্লির জন্য শেখ হাসিনার শাসনের পতন একটি বিপর্যয়ের চেয়ে কম কিছু নয়। এমনটাই বলছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্যা গার্ডিয়ান।

১৯৭৫ সালে তার পিতা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর একবার হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেয়া হয়েছিল এবং ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসার আগে পর্যন্ত তিনি তার স্বামী ও সন্তানসহ ছয় বছরেরও বেশি সময় ভারতে নির্বাসনে ছিলেন।

দ্যা গার্ডিয়ান বলছে, নয়াদিল্লিতে বিজেপি এবং কংগ্রেস উভয় দলের সঙ্গে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক বাংলাদেশকে ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ এবং সবচেয়ে বিশ্বস্ত আঞ্চলিক মিত্র হতে সাহায্য করেছিল। একই সাথে বাংলাদেশকে চীনের খপ্পর থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করেছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত তার প্রথম মেয়াদে এবং তারপরে ২০০৯তে পুনঃনির্বাচিত হওয়ার পর, হাসিনা পানিপথে অ্যাক্সেস এবং ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সাথে লাভজনক চুক্তি করার মাধ্যমে ভারতের দিকে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন।

বিনিময়ে, শেখ হাসিনার শাসনব্যবস্থা ক্রমবর্ধমান নিপীড়ক ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠলেও সে বিষয়ে নির্বিকার এবং চোখই ফিরিয়ে রাখে ভারত। বরং ভারতীয় কর্মকর্তা ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধেও বাংলাদেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা এবং শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে অন্যান্য দেশকে চাপ দেওয়ার মত অভিযোগ ছিল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। কূটনৈতিক সূত্রের বরাতে দ্যা গার্ডিয়ান বলছে, ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে হাসিনার ওপর চাপ কমানোর জন্য ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ব্যবহার করে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো শাফকাত মুনির বলেন, “ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক মূলত একটি ব্যক্তি এবং একটি দলের সাথে সম্পর্ক হয়ে উঠেছে।”

বেশ কয়েকজন বিশ্লেষকের মতো মুনিরও জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পর্যালোচনা করার জন্য নয়া দিল্লিকে আহ্বান জানিয়েছেন।

মুনির বলেন, এখন ভারতের এটা মেনে নেওয়া দরকার যে শেখ হাসিনা চলে গেছেন, এখন সম্পর্কটিকে সম্পূর্ণরূপে পুনঃস্থাপন এবং পুনরায় চালু করতে হবে। দেশগুলির মধ্যে সম্পর্ক সরকার পরিবর্তনের অস্থিরতার কাছে জিম্মি হতে পারে না।

তবে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের উপর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল ভারতে শেখ হাসিনার বর্তমান উপস্থিতি। যদিও তার পরিবার বলছে, শেখ হাসিনা ভারতে স্থায়ীভাবে থাকবেন না এবং তার প্রত্যাবর্তনের জন্য বাংলাদেশ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যর্পণের অনুরোধ করা হয়নি, তবে তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য অধিকার কর্মী এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের কাছ থেকে ক্রমবর্ধমান কল আসছে ভারতের কাছে।

এছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা ও অপহরণে ভূমিকা রাখার অভিযোগে ১০০টিরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাম্প্রতিক বিক্ষোভের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের সাথে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। শেখ হাসিনা ভারত সফরে যে কূটনৈতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করতেন তাও বাতিল করেছে বাংলাদেশ সরকার।

ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ তথা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলী রিয়াজ বলেন, হাসিনার আকস্মিক পতনে ভারতকে একটি ‘গুরুতর গোয়েন্দা ব্যর্থতার’ মুখোমুখি হতে হয়েছিল। যার অর্থ উল্লেখযোগ্য আঞ্চলিক বিপর্যয়ের জন্য ভারত অপ্রস্তুত ছিল। ক্রমবর্ধমান ভারত-বিরোধী মনোভাব এখন বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।’

তিনি মনে করেন- ‘ভারত রাষ্ট্রীয় সম্পর্ককে গুরুত্ব না দিয়ে শেখ হাসিনা ও তার দলের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করে সব ডিম এক ঝুড়িতে রেখেছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অত্যন্ত অলীক নীতি অনুসরণ করেছে। ফলস্বরূপ, ভারত এখন নিজেই একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে।’

দ্য গার্ডিয়ান বলছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে নতুন সরকারের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সংস্কারের কথা সেভাবে উল্লেখ করেনি ভারত। বরং প্রতিক্রিয়ায় বার বার প্রতিবেশী দেশে অস্থিরতা এবং হিন্দু সংখ্যালঘুদের হুমকির বিষয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন মোদি।

এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে ফোনালাপেও এ বিষয়ে পুনরায় জোর দেওয়া হয়েছিল ভারতের পক্ষ থেকে। দেশটির দাবি এই দুই নেতা বাংলাদেশে “স্বাভাবিকতা দ্রুত পুনরুদ্ধার” এবং আইনশৃঙ্খলার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।

যদিও মার্কিন বিবৃতিতে বাংলাদেশের বিষয়ে কোনো উল্লেখই করা হয়নি। এ বিষয়ে একজন বাংলাদেশী ভাষ্যকার বলেন, আমরা স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি না। আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করছি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By ThemesDealer.Com