সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
ডিবিসি চ্যানেলের পরিচালক ও তার পরিবারের নামে মিথ্যা সংবাদ প্রচার:থানায় সাধারণ ডায়েরি ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতায় যেসব কাজ করতে পারবে সেনাবাহিনী শেখ হাসিনাকে দোটানায় থাকতে দিল ভারত বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু, পানিবন্দী ৯ লাখ পরিবার ৮ জেলা বন্যাকবলিত, আরও বিস্তৃত হতে পারে শেখ হাসিনার বিচারের বিষয়ে অবস্থান জানাল জাতিসংঘ ঢাকা শহরকে দূষণমুক্ত ও বাসযোগ্য করতে যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে :সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করেছে এনবিআর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের বিদায়ী সাক্ষাৎ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ

মোদির ভারতে কেমন আছেন মুসলিমরা?

Reporter Name / ১৪ Time View
Update : শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এক দশকের শাসনামলে দেশটিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলিমদের অধিকার ক্রমশ কমে আসছে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) মুসলিমবিরোধী বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশটির একমাত্র মুসলিম অধ্যুষিত জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা বাতিল করেছে মোদি সরকার। অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের স্থানে নির্মিত হয়েছে রামমন্দির। একাধিক রাজ্যে গরুর মাংস বিক্রি করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মুছে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে মুঘল আমলের বিভিন্ন নাম ও স্মৃতিচিহ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে উঠে এসেছে। সব মিলিয়ে ধর্মীয় জনগোষ্ঠী হিসেবে হিসেবে সেখানকার মুসলিমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে তৃতীয় মেয়াদে মোদি ক্ষমতায় এলে বিভাজন আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সংখ্যার দিক দিয়ে তৃতীয় মুসলিম প্রধান দেশ ভারত। ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের পর, ভারতেই সবচেয়ে বেশি মুসলমানের বসবাস। ১৪৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে

এক দশক আগেও সেখানকার মুসলিমরা নিজেদের ভারতীয়ই মনে করত। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তারা হিন্দু-মুসলিমরা পাশাপাশি মিলেমিশেই থাকত। হিন্দুদের পালা-পার্বনে, পুজা-আর্চনায় মুসলিমরাও সামিল হতেন। আবার মুসলিমদের ঈদ আনন্দসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হিন্দুদের অংশগ্রহণও ছিল স্বাভাবিক।

কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। দিল্লির উপকণ্ঠে দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রী ও চার মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছেন জিয়া-উস সালাম। পেশায় তিনি ভারতের অন্যতম দৈনিক পত্রিকার একজন চলচ্চিত্র সমালোচক। স্ত্রী উজমা আউসফও সাংবাদিক হিসেবে জীবনযাপন, খাদ্য ও ফ্যাশন সম্পর্কে লিখতেন। সালাম বলেন, একটা সময় ছিল যখন সিনেমা, শিল্প, সংগীতে জীবনটা পরিপূর্ণ ছিল। আড্ডা হত, গান হত, আলোচনা-সমালোচনা সবই হত। অফিস শেষে শুধু প্রিয় একটা খাবার খাওয়ার জন্য পুরনো এক বন্ধুর মোটরসাইকেলের পিছনে বসে দূরের একটা স্টলে যেতাম আমরা। সেখানে আরও কয়েকজন বন্ধু আসত। চাকরির ক্লান্তি কেটে যেত সেই আড্ডায়।

আর এখন? ৫৩ বছর বয়সী সালাম বলেন, এখন প্রাণহীন জীবন কাটাচ্ছি। অফিস আর বাসা, বাসা আর অফিস; এর মধ্যেই জীবন আটকে গেছে। এখন আর আড্ডা হয় না। কারণ এখন প্রতি মুহূর্তে নিজের মুসলিম পরিচয়টা নিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়। কী ব্যাংকে, কী পার্কিং লট, এমনকি যাত্রীবাহী ট্রেনেও। মুসলিমদের জন্য সব কিছু আলাদা হয়ে গেছে।

সালাম আরও বলেন, এখন ভীষণ চিন্তা হয়, দুশ্চিন্তা। কীভাবে মেয়েদের সঠিকভাবে বড় করে তুলবো? যে দেশে মুসলিম পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, এমনকি মুসলিম পরিচয়টাকেই মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়, মুসলিমদের ভারতীয় পরিচয়টাই নাই করার চেষ্টা চলছে যে দেশে; যেখানে মুসলিমরা কী খাবে, কী পোশাক পরবে, কী চিন্তা করবে তাও নির্ধারিত।

ক্ষোভ নিয়ে সালাম বলেন, কেমন লাগবে আপনার, যখন আপনি জানেন যে, আপনার দেশের নেতারাই আপনাকে চায় না। দীর্ঘদিনের বন্ধু এখন আর আগের মতো নেই। প্রতিবেশীদের পালা-পার্বনে আর ডাক পড়ে না। সুখে-দুঃখে এখন আর কেউ পাশে এসে দাঁড়ায় না। এখানে এখন এক একটি মুসলিম পরিবার একাকী, নিঃসঙ্গ, অনাহুতের মতো বসবাস করে।

নয়াদিল্লির অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ইতিহাসবিদ আলী খান মাহমুদাবাদ বলেন, ভারত এখন এমন এক দেশে পরিণত হয়েছে যেখানে মুসলমানরা মূলত প্রান্তিক হয়ে পড়েছে। কারণ তাদেরকে সক্রিয়ভাবেই বাদ দেওয়া হয়েছে।

সালাম-উজমার বড় মেয়ে মরিয়ম খুব ভালো অ্যাথলেট ছিল। কিন্তু স্কুলে পড়ার সময় মুসলিম হিসেবে সে এতোটাই নিগৃহীত হয়েছে যে, দীর্ঘদিন মানসিক কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজন পড়েছিল। অনেকদিন সে স্কুলেও যায়নি। এখন স্নাতক শিক্ষার্থী। এই মানসিক আঘাত মরিয়ম কাটিয়ে উঠতে পরেছেন ঠিকই, কিন্তু তিনি চান না দিল্লির এই বাড়িতে থাকতে। তিনি চান দিল্লির কাছাকাছি উত্তর প্রদেশের নয়দার মুসলিম পাড়ায় গিয়ে থাকতে। যদিও তার বাবা-মা তাতে রাজি নন। বরং তারা চান, তাদের সন্তান বিদেশে পাড়ি জমাক।

কারণ হিসেবে সালাম বলেন, এখানে মুসলিমদের কেউ বাড়ি ভাড়া দিতে চান না। রিয়েল এস্টেট এজেন্টরা সরাসরি জিজ্ঞেস করেন, তারা হিন্দু না মুসলিম। কী হবে এদেশে থেকে যেখানে মুসলিমরা অস্তিত্বের সংকট নিয়ে বেড়ে উঠছে, প্রশ্ন তার।

সহসাই এই অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে মনে করেন না সালাম। বরং আবার মোদি ক্ষমতায় এলে আরও কোনঠাসা হয়ে পড়বে মুসলিমরা।

মাহমুদাবাদ আরও বলেন, জনপ্রতিনিধি ছাড়া আপনি রাষ্ট্রের কাছে প্রয়োজনীয়তার কথা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরি বা অন্যান্য মৌলিক অবকাঠামোর বিষয়গুলো কীভাবে তুলে ধরবেন? মুসলিমদের হয়ে কথা বলার কে আছে এখানে?

আশির দশকের মাঝামাঝিতে ভারতের জনসংখ্যার ১১ শতাংশ ছিল মুসলিম। তখন পার্লামেন্টে তাদের আসন ছিল ৯ শতাংশ। এখন মুসলমান জনসংখ্যার হার বেড়েছে। কিন্তু পার্লামেন্টে তাদের আসন কমেছে। এখন মাত্র ৫ শতাংশ মুসলিম জনপ্রতিনিধি রয়েছেন পার্লামেন্টে।

 

 

মুসলিমরা সংখ্যালঘু। দেশটিতে মুসলিম জনসংখ্যা ২০ কোটি ও হিন্দু জনসংখ্যা ১১৫ কোটি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
Theme Created By ThemesDealer.Com