চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
কলেজছাত্র সিবলি সাদিককে (১৯) অপহরণের পর হত্যা এবং সেই ঘটনায় পুলিশের কাছ থেকে আসামিকে ছিনিয়ে পিটিয়ে মারার ঘটনায় চট্টগ্রামের রাউজানের পঞ্চপাড়া গ্রাম এখন পুরুষশূন্য। হত্যার পর টুকরা টুকরা করা সিবলির লাশ ময়নাতদন্তের পর গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাড়িতে এনে দাফনের সময় গ্রামের পুরুষেরা ছিলেন না। আজ বুধবার সকালে গ্রামের দোকানপাট খোলেনি। সড়কে, বাজারে বা বাড়িতে দেখা যায়নি গ্রামের কোনো পুরুষ কে।
নিহত সিবলি রাউজান উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়া গ্রামের মুহাম্মদ শফির ছেলে। স্থানীয় কদলপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন তিনি। পিকআপ ভ্যানের চালক শফির দুই ছেলের মধ্যে তিনি বড় ছিলেন।
পুলিশ এ ঘটনায় আসামি ছিনতাই, পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর ও হামলার অভিযোগে স্থানীয় বাসিন্দাদের অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেছে। এরপর গ্রামটিতে গ্রেপ্তার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
গতকাল বিকেল চারটার দিকে পঞ্চপাড়া গ্রামের মূল সড়কের হজরত আশরাফ শাহের তোরণের কাছে গিয়ে দেখা যায়, এখানকার বাজারটির ১০টির বেশি দোকানে তালা দেওয়া। বাজারে মানুষ নেই। নেই চা-দোকানের আড্ডাও। ভেতরের সড়কে কিছু দূর এগোলে যে স্থানে গত সোমবার আসামি উমংচিং মারমাকে (২৭) পিটিয়ে মারা হয়েছে, সেখানে বিলের ধারে চার পাঁচজন বয়স্ক নারী দাঁড়িয়ে ছিলেন।
মুরগির খামারে ঝগড়ার জেরে কলেজছাত্র সিবলিকে অপহরণ করে গলা কেটে হত্যা করেন শ্রমিকেরা
নিহত কলেজছাত্র সিবলি সাদিক
তাঁদের একজন ষাটোর্ধ্ব আনোয়ারা বেগম বলেন, একটা ছেলেকে কেমনে মেরে কেটে টুকরা টুকরা করে ফেলল। আল্লাহ এর বিচার করবেন। সরকারও যেন বিচার করে। আমেনা খাতুন নামের আরেকজন বলেন, কাছের বাজারটির দোকানপাট সোমবার থেকে বন্ধ। দুই কিলোমিটার দূরের বাজারে যাচ্ছেন তিনি। পুরুষেরা বাড়িতে নেই, তাই তিনি বাজারে যাচ্ছেন।
গতকাল সিবলির খণ্ডিত লাশ যখন বাড়িতে আনা হয়, তখন তাঁর বাবা–চাচা আর কয়েক ভাই ছিলেন। গ্রামের অন্য পরিবারের পুরুষ সদস্যদের দেখা যায়নি এ সময়। পরিবারের পুরুষ সদস্যরাই দাদির কবরের পাশে সিবলির কবর দেন। বাড়িতে তখন গ্রামের বিপুলসংখ্যক নারী উপস্থিত ছিলেন।
সিবলির চাচা শিক্ষক মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, ছেলেটাকে এমন নিষ্ঠুরভাবে কেটে টুকরা টুকরা করল! তাঁর জানাজা পড়ানোর মতো লাশের দেহাবশেষ ছিল না। জানাজা ছাড়াই দাফন করা হয় তাঁর দেহ।
রাউজানে অপহরণ মামলার আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা
সিবলি সাদিক
পুলিশ, মামলার এজাহার ও আদালতে দেওয়া দুই আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে জানা গেছে, গত ২৮ আগস্ট গভীর রাতে সিবলিকে খামার থেকে অপহরণ করা হয়। এরপর তাঁকে আট কিলোমিটার দূরে গহিন জঙ্গলে নিয়ে আটকে রেখে পরিবারের সদস্যদের কাছে মুঠোফোনে মুক্তিপণ চাওয়া হয়। ২৯ আগস্ট তাঁকে সেই পাহাড়ে গলা কেটে হত্যা করে লাশ টুকরা টুকরা করা হয়। ৩১ আগস্ট আবার চাওয়া হয় মুক্তিপণ। এরপর ২ সেপ্টেম্বর সিবলির বাবা বান্দরবানে গিয়ে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ তুলে দেন দুই ব্যক্তির হাতে। তবে ছেলেকে ফিরে পাননি তিনি।
জবানবন্দি দেওয়া ওই দুই আসামি হলেন রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের সুইচিংমং মারমা (২৫) ও রাঙামাটির কাউখালীর অংথুইমং মারমা (২৬)। দুই আসামি গতকাল বিকেলে চট্টগ্রামের দুই আদালতে জবানবন্দিতে বলেন, মাসখানেক আগে খামারের কাজ নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সিবলির সঙ্গে পাঁচ-ছয়জন শ্রমিকের বাগ্বিতণ্ডা হয়। সেই ঝগড়ার মীমাংসা করে দেন খামারের মালিকেরা। তবে তাঁরা সিবলির ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। এর জেরে সিবলিকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে।
- ‘চাঁদা তুলি দুই লাখ টিয়া দি আইসসিলাম, ত কিল্লেই আর পোয়ারে টুরো টুরো গইল্লু’
পুলিশের অভিযানে সিবলী সাদিকের দেহাবশেষ উদ্ধারের খবর পেয়ে মা নাহিদা আকতারের আহাজারী। গতকাল সোমবার দুপুরে কদলপুরের পঞ্চপাড়ায়
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল হারুন তোলপাড়২৪.কম কে বলেন, মামলায় আসামির সংখ্যা ও নাম রাখা হয়নি। দুটি মামলার সব আসামি অজ্ঞাতনামা। ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হবে বলে জানান তিনি।